Showing posts with label International Submission. Show all posts
Showing posts with label International Submission. Show all posts

Friday, March 4, 2011

Dr. Zafar Iqbal on Dr. Yunus

Dr. Zafar Iqbal on Dr. Yunus and the Controversy.


 সাদাসিধে কথা

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও বাংলাদেশ  


মুহম্মদ জাফর ইকবাল
তারিখ: ০৫-০৩-২০১১





 

যাঁরা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস, গ্রামীণ ব্যাংক, বাংলাদেশ সরকার এবং দেশের আইনকানুন নিয়ে নির্মোহ, বস্তুনিষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ আলোচনা পড়তে চান, তাঁদের এ লেখাটি পড়ার প্রয়োজন নেই। এটি সে রকম একটি লেখা নয়, এটি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে অসম্ভব পছন্দ করে, সে রকম একজন মানুষের অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট একটি লেখা।


আমি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে অসম্ভব পছন্দ করি এবং তার চেয়ে বেশি সম্মান করি। আমি জানি, এ দেশে আমার মতো এ রকম মানুষের কোনো অভাব নেই। মনে আছে, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার খবরটি পেয়ে আমি আনন্দে কাণ্ডজ্ঞানহীন মানুষের মতো চেঁচামেচি করেছিলাম। ক্রিকেট বাংলাদেশ টিম যখন পাকিস্তান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডের মতো টিমকে হারায়, তখন টেলিভিশনের সামনে লাফঝাঁপ দিয়ে আনন্দে চিৎকার করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু একটি খবর শুনে আনন্দে লাফঝাঁপ দিয়ে চিৎকার করার ঘটনা আমার জীবনে খুব বেশি ঘটেনি। আমার একজন পরিচিত মানুষ নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, সেটি আনন্দের কারণ ছিল না, আনন্দের কারণ ছিল এক ধাক্কায় বাংলাদেশের মর্যাদার জায়গাটি অনেক উঁচুতে উঠে যাওয়াটুকু। যাঁরা জীবনের একটা অংশ বিদেশের মাটিতে কাটিয়ে এসেছেন, শুধু তাঁরাই জানেন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিটিকে বিদেশের মাটিতে কী নিষ্ঠুরভাবে তাচ্ছিল্য এবং অসম্মানের সঙ্গে উপস্থাপন করা হয় এবং প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস একা সেটিকে কত বড় একটি মর্যাদার আসনে নিয়ে গেছেন।


কিছুদিন আগে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে বাংলাদেশের ওপর খুব চমৎকার একটা রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল, সেখানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মানুষের মানসিকতার স্বরূপ বোঝানোর জন্য লেখা হয়েছিল, পাকিস্তানের জনগণের কাছে জাতীয় বীর হচ্ছেন দুর্বৃত্ত (ৎogue) নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানী আবদুল কাদির খান, যিনি বেআইনিভাবে দেশে-বিদেশে নিউক্লিয়ার অস্ত্র চোরাচালানি করেন আর বাংলাদেশের জাতীয় বীর হচ্ছেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে দরিদ্র নারীদের সাহায্য করেন।


SmokeStik ™ Smokeless Cigarettes. Assembled in USA. SALE...Get 10% Off Today! Advertisement




সেই প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে এ দেশের সরকার খুব ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে হেনস্থা করতে শুরু করেছে। এটি নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি এজেন্ডা ছিল এবং আগে হোক পরে হোক, এটি নিশ্চয়ই শুরু হতো। গত ডিসেম্বর মাসে নরওয়ের একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান এই হেনস্থাকরণ-প্রক্রিয়া শুরু করার চমৎকার একটা সুযোগ করেছিল। নব্বইয়ের দশকে নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়া সেই বিষয়টির সূত্র ধরে প্রথমেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে এমন কঠোর ভাষায় কিছু বক্তব্য দিলেন, যেটি শুনে এই দেশের কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন প্রত্যেকটি মানুষ হতবাক হয়ে গেল। আমাদের সংস্কৃতিতে আমরা সম্মানী মানুষের, বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠ সম্মানী মানুষের সম্মান রক্ষা করে কথা বলি, তাই প্রধানমন্ত্রীর সেই কথাগুলো এ দেশের অনেক মানুষকে অত্যন্ত ব্যথিত করেছিল। আমাদের অর্থমন্ত্রী প্রথমে যৌক্তিকভাবে কিছু কথা বললেন, কিন্তু নিশ্চয়ই তখন তাঁকে রূঢ় ভাষায় কথা বলার জন্য চাপ দেওয়া হলো এবং তখন তিনিও একই ভাষায় কথা বলতে শুরু করলেন। সাধারণভাবে বাঁশের চাইতে কঞ্চি বড় হয়ে থাকে, তাই সবচেয়ে কদর্যভাবে কথা বলতে শুরু করল ছাত্রলীগ। তাদের কথাগুলো লেখার মতো নয়, যত দূর মনে পড়ে, তারা নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেওয়ার হুমকিও দিতে থাকে। মৌখিক খিস্তির পর আমরা রাষ্ট্রীয় হেনস্থার স্বরূপটি দেখতে পেলাম। বাংলাদেশের আনাচকানাচে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নামে মামলা হতে লাগল এবং আমরা দেখতে পেলাম, প্রফেসর ইউনূস সারা দেশে ছোটাছুটি করে সেই মামলার জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন। যে মানুষটি সারা পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানী মানুষদের একজন, তাঁকে তাঁর দেশের সরকার এ রকমভাবে অসম্মান করতে পারে, সেটি নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস হতে চায় না। আজকের (বৃহস্পতিবার) খবরের কাগজে দেখেছি, সরকার তাঁকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অপসারণ করেছে। আমি নিশ্চিত, সরকারের পক্ষ থেকে নানা রকম আইনকানুন দেখানো হবে, কিন্তু পুরো বিষয়টি এমনভাবে ঘটে এসেছে যে, আমি বাজি ধরে বলতে পারি, এ দেশের সাধারণ মানুষ আর সেগুলো বিশ্বাস করবে না। তারা ধরেই নেবে, এটি হচ্ছে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে হেনস্থা করার আরও একটি ধাপ, শত হাইকোর্ট দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে তাদের বিশ্বাস থেকে টলানো যাবে না।


Planning a trip to NYC? Take along the New York Pass  Advertisement


এ খবরটি অবিশ্বাস্য দ্রুততায় এবং অবিশ্বাস্য গুরুত্বের সঙ্গে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে। বেশ কয়েক বছর আগে জেএমবি যখন সারা দেশে একসঙ্গে বোমা ফাটিয়েছিল, তখন দেশের খুব বড় একটা ক্ষতি হয়েছিল, পৃথিবীর অনেকেই ধরে নিয়েছিল, আমাদের দেশটি বুঝি জঙ্গিদের। অনেক দিন পর আবার দেশের খুব বড় একটা ক্ষতি হলো, সারা পৃথিবী ধরে নিল, এ দেশের সরকার হচ্ছে অকৃতজ্ঞ ও প্রতিহিংসাপরায়ণ। যে মানুষটি এ দেশের মর্যাদা সারা পৃথিবীর সামনে উঁচু করেছেন, এ দেশের সরকার তার পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করছে তাঁকে অসম্মান করার জন্য!


প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক এবং ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়। এর পক্ষে-বিপক্ষে অনেক মানুষ। আমাদের সবারই ইচ্ছে, এ বিষয় নিয়ে গবেষণা হোক, তথ্য-উপাত্ত দিয়ে যুক্তিপূর্ণ আলোচনা হোক এবং ভেতরের সত্যটুকু বের হোক। কতটুকু আশার ব্যাপার, কতটুকু স্বপ্ন, কতটুকু বাস্তব এবং কতটুকু অবাস্তব, সেই তথ্যগুলো আমাদের সামনে প্রকাশিত হোক, কিন্তু তার মানে কি এই বিষয়ের স্বপ্নদ্রষ্টাকে অসম্মান করা হবে? এবং এত স্থূলভাবে?


সত্তর ও আশির দশকে বাংলাদেশ পৃথিবীর সামনে পরিচিত হতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। এই সরকার বিশ্বাস করুক আর না-ই করুক, এই দশকে পৃথিবীতে বাংলাদেশ পরিচিত হয় প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে দিয়ে। কাজেই যখন এ দেশে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে অসম্মান করা হয়, তখন যে বাংলাদেশকেই পৃথিবীর সামনে অসম্মান করা হয়, সেই সহজ কথাটি কি এই সরকারের ভেতর কেউ জানে না?


Book US Airways flights starting at $122 R/T and save an extra $15 on US Airways Tickets. Book now!  Advertisement





 প্রকাশ্যে থুথু ফেলা অশোভন কাজ। যদি ফেলতেই হয়, তাহলে নিচের দিকে ফেলতে হয়। কখনোই ওপরের দিকে কাউকে লক্ষ্য করে থুথু ফেলতে হয় না। তাহলে অবধারিতভাবে সেই থুথু নিজের মুখের ওপর এসে পড়ে।


এই সরকার কি জানে, তারা মুখ ওপরের দিকে করে থুথু ফেলছে?


মুহম্মদ জাফর ইকবাল: লেখক। অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

Source: Prothom-Alo

Next -->  Humor - Disorder in the American Courts

More Humor: New Seat Belt Law
                        Just For Laughter




Source: Prothom Alo

Tuesday, March 1, 2011

ক্রিকেট: ঘরের মাঝে বিশ্বরূপ

by Guest Writer Kamrul Hassan






কামরুল হাসান




ক্রিকেট: ঘরের মাঝে বিশ্বরূপ


ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১১


বিশ্বকাপ ক্রিকেটের জমজমাট আসর বসেছে ভারতীয় উপমহাদেশে, ১৭ই ফেব্রুয়ারী যার বর্ণাঢ্য উদ্বোধন হয়ে গেল ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। ১৯৯৬ সালের পর এই দ্বিতীয়বার উপমহাদেশে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফিরে এল। ঐ বছর উপমহাদেশেরই একটি দেশ – শ্রীলঙ্কা – কাপটি জিতেছিল। এর ঠিক তের এবং চার বছর আগে কাপটি জিতেছিল যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তান। যেহেতু টেস্ট ক্রিকেটের কোন বিশ্ব প্রতিযোগিতা নেই, তাই সীমিত ওভারের এই একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপই সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতা। এমনিতে সারা দুনিয়ায় ক্রিকেট খেলে হাতে গোনা কয়েকটি দেশ। ফুটবল যেভাবে বিশ্বব্যাপী চর্চ্চিত একটি খেলা, ক্রিকেট সেরূপ নয়। আরো অনেক খেলার মতই ক্রিকেট আবিস্কৃত হয়েছিল ইংল্যাণ্ডে। প্রাক্তন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতেই তা টিকে আছে, রাজার দেশটিতো আছেই, আর যেসব দেশ আছে সেগুলো হল ঐ রাজার দেশের ভূতপূর্ব উপনিবেশ। মূলতঃ ক্রিকেট এখনো হারানো ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ও এর লুপ্ত প্রতাপের ছায়ামূর্তি ও প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ঐ কমনওয়েলথ গেমসের মতই। এবার তিনটি দেশ মিলিতভাবে এর আয়োজক – বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা। প্রাথমিক তালিকায় পাকিস্তান থাকলেও শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের উপর জঙ্গীদের সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানকে নিরাপদ ভেন্যু মনে করেনি ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসি। ভাবনাটি অমূলক নয়। সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হওয়া ব্যর্থ রাষ্ট্রটিতে অনেকদিন ধরেই খেলতে যাচ্ছে না কোন দেশ।






উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দিয়ে আইসিসি বাংলাদেশকে দায়িত্বশীল ও গর্বিত করেছে। অনেকেরই মনে শঙ্কা ছিল, বাংলাদেশ পারবে তো? ফেব্রুয়ারীর সতের তারিখের জমকালো অনুষ্ঠান দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে, জানিয়েছে আমরাও পারি। যদিও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ডামাডোলের ভিতর ক্রিকেট কিছুটা হলেও উপেক্ষিত থেকেছে, তবু লেজার রশ্মি ও আতশবাজির মধ্য দিয়ে তিন দেশের নৃত্য-গীত উপস্থাপনা মন কেড়েছে লাখো দর্শকের। শুরুর ভুল উচ্চারণের ইংরেজী বক্তৃতামালা ছাড়া বাকী পুরো অনুষ্ঠানটি ছিল মন্ত্রমুগ্ধকর। রিকশায় চড়ে ১৪ দেশের অধিনায়কের স্টেডিয়ামে প্রবেশ বিদেশীদের কাছে অভিনব মনে হয়েছে, যদিও যন্ত্রেটানা সভ্যতার এই বিশ্বে মানুষে-টানা রিকশা কতখানি সমাদৃত হবে, তা ভাবনার বিষয়; তবে রিকশা মানববান্ধব না হলেও পরিবেশবান্ধব। শিল্পব্যাংকের সুউচ্চ খাড়া দেয়ালের ক্রিকেটও ছিল অভিনব। বহুবর্ণিল লেজার আলোর নাচানাচি, আতশবাজির ক্রমাগত উদগীরণ আর শিল্পীদের ঢেউখেলানো পাফরমেন্সের ভিতর কোন ছন্দপতন ঘটেনি। আমাদের কেবল মুখরক্ষাই হয়নি, মুখউজ্জ্বলও হয়েছে। যে বাংলাদেশকে দুনিয়া চেনে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত, বিপন্ন মানুষদের দরিদ্র দেশ হিসেবে, তার অমন জমকালো প্রদর্শনী কিছুটা বিভ্রম তৈরি করলেও পজিটিভ ধারণা সৃষ্টি করেছে। এখন প্রয়োজন বিদেশীদের এই জেগে ওঠা আগ্রহকে আমাদের সম্ভাবনাময় অথচ অবহেলিত পর্যটনশিল্পের বিকাশে কাজে লাগানো।






ক্রিকেট নিয়ে উপমহাদেশের মানুষদের উন্মাদনা কীরূপ এবং তা কোন উত্তুঙ্গ ছোঁয় তা জানে আইসিসি। খেলাটির জন্মভূমিতেও এখন আর তেমন দর্শক টানে না ক্রিকেট। এর একটি কারণ ক্রিকেট অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও ধীরগতির খেলা। আজকের রকেট যুগে মানুষের হাতে সত্যিই অত সময় নেই কাজ ফেলে রেখে বসে বসে দিনভর ক্রিকেট দেখবে। উপমহাদেশের মানুষ বুঁদ হয়ে আজো খেলাটি দেখে, কেননা তাদের হাতে পর্যাপ্ত কাজ নেই। আগে ক্রিকেট বলতে ছিল টেস্ট ক্রিকেট, পাঁচদিন ধরে যা শম্বুকগতিতে চলত। আধুনিক মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সীমিত ওভারের একদিনের খেলা চালু হয় ১৯৭৫ সালে। এখন আরো সংক্ষিপ্ত হয়েছে খেলাটি, এসেছে টোয়েন্টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। এভাবেই যুগের সাথে বদলে যাচ্ছে খেলাটি ও এর ফরম্যাট। ক্রিকেটারদের উপার্জন হয়ে উঠেছে চক্ষু চড়কগাছ হবার মত বিস্ময়কর, মর্ত্যে তারা স্বর্গের জীবনযাপনই করছেন। কেবল খ্যাতি ও মর্যাদা নয়, ক্রিকেট হয়ে উঠেছে স্বপ্নের এক ক্যারিয়ার। আশ্চর্য নয় যে, অনেক অভিভাবক এখন সন্তানদের ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতিতে বিরক্ত না হয়ে বরং উৎসাহ দেন, আর এটাই হচ্ছে ভবিষ্যতে ভাল ক্রিকেটার পাবার অন্যতম পথ।

Planning a trip to NYC? Take along the New York Pass  Advertisement


ক্রিকেট নিয়ে উপমহাদেশের দর্শকদের বিপুল মাতামাতি খেলাটির সর্বোচ্চ আসরটিকে যৌক্তিক নিয়মেই নিয়ে এসেছে ভারত-বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কায়। ভারতে ক্রিকেটের বরপুত্রদের সাধারণ জনগণ দেবতার আসনে বসিয়ে রাখেন। বস্তুতঃ বহু ভাষা, জাতি ও বর্ণের দেশ ভারতে ক্রিকেটের মত খুব কম জিনিষই আছে যা গোটা ভারতকে একত্রিত রাখে। বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর জন্য ভারত হচ্ছে এক বিশাল পন্যবাজার, কেননা ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেনীটি, যেটির রয়েছে ক্রয়ক্ষমতা, তার আকার সমগ্র ইউরোপের জনসংখ্যার চেয়ে বেশী। সুতরাং তারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ভারতে। ভারতীয় জনগণের ক্রিকেটপ্রীতিকে তারা ভালই কাজে লাগাচ্ছে ভোক্তার মন জয় করে নিতে। এছাড়া রয়েছে ভারতীয় ধনিকশ্রেনী যারা আইপিএলের মত টাকা ছড়ানো আসর বসিয়েছে ভারতে, ফলে পৃথিবীর সকল ক্রিকেটারই এখন ভারতমুখী। খেলাটির ভবিষ্যৎ যে উপমহাদেশেই আর একে অর্থনৈতিকভাবে বাঁচিয়ে রাখবে ভারতই – এটা জানে আইসিসি। জঙ্গী সন্ত্রাসে বিপর্যস্ত আর টুকরো টুকরো হয়ে পড়ার আশঙ্কাগ্রস্থ পাকিস্তানেও ক্রিকেটই হচ্ছে ঐক্যের সূত্র – যা সকল পাকিস্তানিকে একই আবেগে দোলায় ও একত্রিত রাখে ।










স্বাধীনতার আগে ও পরে বাংলাদেশের প্রধান খেলা ছিল ফুটবল। সত্তরের শেষভাগে ও আশির শুরুতে ফুটবল নিয়ে তীব্র মাতামাতি ছিল, সুপারস্টার ফুটবলেরা সাড়ম্বরে দল-বদল করতেন এবং ঈর্ষাজনক ট্রান্সফার ফি পেতেন। সে সময়ে ক্রিকেটের তেমন কোন জনপ্রিয়তা ছিল না। আশির দশকের মাঝামাঝি টেলিভিশনের কল্যাণে আমরা বিশ্বকাপ ও ইউরোপীয় ফুটবল দেখার সুযোগ পাই, তুলনায় আমাদের ফুটবলকে পানসে, বিবর্ণ মনে হয়। এ ছাড়া ক্লাব ফুটবলের ভালো ফুটবলাররা জাতীয় দলে পা বাঁচিয়ে খেলতো। আঞ্চলিক ফুটবলেও তেমন কোন সাফল্য আমরা পাইনি। এসবই দর্শকদের মন থেকে ফুটবলকে সরিয়ে দেয়। যেহেতু গুটিকয় দেশের মাঝে খেলাটি সীমিত, ক্রিকেটে ভাল ফলাফল করা অনেক সহজ, বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটাররা তাই করে দেখিয়েছে। মালয়েশিয়ায় আইসিসি ট্রফি জয়লাভের মধ্য দিয়ে ক্রিকেটের যে বিজয়আনন্দযাত্রা শুরু হয়েছিল আজো তা অব্যাহত রয়েছে। মনে আছে সে সময়ে বিজয়ী দলটিকে সম্বর্ধনা জানাতে মানুষের ঢল নেমেছিল মানিক মিয়া এ্যাভেনুতে। গোটা দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল ক্রিকেটারদের শুভেচ্ছা জানাতে, উদ্বেলিত হয়েছিল তাদের সাফল্যে, কেননা তা ছিল বাংলাদেশেরই সাফল্য। ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ ও জাতীয় দলের সাম্প্রতিক পারফরমেন্স আমাদের প্রত্যাশার পারদকে বহুঊর্ধ্বে তুলে দিয়েছে। বিশ্বকাপ নিয়ে উৎসাহের শেষ নেই মানুষদের। তারা দল বেঁধে ঢাকার আলোকসজ্জা দেখছে, বিশ্বাস করছে আন্তরিক হলে আমরাও আমাদের নোংরা শহরটিকে পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি। পারি একটি চোখধাঁধানো অনুষ্ঠান বিশ্বকে উপহার দিতে, পথে পথে বর্ণিল আলোকমালার বিস্ময়কর সৌন্দর্য সাজাতে।






১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপে প্রথম আবির্ভাবেই পরাশক্তি পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ সাড়া ফেলেছিল। পুরো দেশ আনন্দ- উত্তেজনায় গর্জে উঠেছিল, যেন ১৯৭১ এর পরে আমরা আরো একবার পাকিস্তানকে হারালাম। তখন সংবাদপত্রের শিরোনাম ছিল ‘বাঘের গর্জন শুনেছে বিশ্ব’। ভারতকে হারানো ছিল গত বিশ্বকাপের বড় অঘটন, যে কারণে ভারতের বিশ্বকাপ মিশনই শেষ হয়ে গিয়েছিল, একশ কোটি ভারতীয় চরম হতাশার তিমিরে ডুবে গিয়েছিল। ভারতের পর ক্রিকেটের আরেক পরাশক্তি দক্ষিন আফ্রিকাকে হারিয়ে আমরা শক্তির জানান দিয়েছিলাম, উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি করেছিলাম কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার। কিন্তু পঁচা শামুক আয়ারল্যান্ডে পা কেটে বিদায় নিতে হয়েছিল। আজকের খেলা সেই পচা শামুকটির সাথেই। এবার আর পা কাটলে চলবে না, কেননা তাহলে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার স্বপ্ন ও সম্ভাবনা মলিন হয়ে যাবে। তাই সতর্কভাবে ডিঙ্গিয়ে যেতে হবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল আয়ারল্যাণ্ড ও নেদারল্যান্ডকে, আর প্রস্তুত হতে হবে বড় দলগুলোকে মোকাবেলা করার জন্য, যাদের অন্ততঃ একটিকে পরাস্ত করার সামর্থ্য বাংলাদেশের আছে।








ক্রিকেট বা ফুটবল নিয়ে কেন মানুষের এই উন্মত্ত্বতা, এই মাতামাতি? বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার কারণে ও মার্ক্সসবাদী দর্শনের প্রসারের ফলে সারা বিশ্বেই ধর্মবিশ্বাসে চিড় ধরেছে মানুষের। রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিও আস্থা নেই তাদের। সাম্প্র্রতিক আরববিশ্বে দৌর্দণ্ডপ্রতাপশালী রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগনের ক্ষোভ ও আন্দোলন সে কথাই প্রমাণ করে। ফলে জনগণ আজ নায়কশূন্য। এই শূন্যস্থান পূরণ করছে মঞ্চের গায়ক, চলচিত্রের নায়ক ও মাঠের খেলোয়াররা। তাইতো একজন শচীন টেন্ডুলকার বা ব্রায়ান লারাকে নিয়ে মানুষ এত মেতে ওঠে। জাতিতে জাতিতে, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সংঘর্ষের সেই প্রাচীন দিনগুলোও সভ্য(?) মানুষ পিছে ফেলে এসেছে। তবে প্রাচীন বিবাদ ও ঈর্ষার বিষয়গুলো এখনো রয়ে গেছে বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার মাঝে। খেলা হয়ে উঠেছে ঐ পুরোনো বিবাদ মীমাংসার নতুন সভ্যরূপ। মাঠগুলো আসলে যুদ্ধক্ষেত্রের প্রতীকিরূপ। ফুটবল বা ক্রিকেট দলটি গোটা দেশ বা জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করে। ঐ ১১জন যোদ্ধা, যারা কাঁধে করে বয়ে বেড়ান একটি দেশের প্রত্যাশার বিপুল ভার। জন্মলগ্ন থেকে বৈরী দুই প্রতিবেশী, ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে সরাসরি যুদ্ধ হয়েছে তিনটি। ফলে বৈরীতা না কমে আরো উত্তুঙ্গ হয়েছে। দু’দেশের মতলববাজ রাজনীতিকরা নিজেদের হীন স্বার্থেই জিইয়ে রেখেছে এই বৈরীতা, যুদ্ধংদেহী করে রেখেছে দুদেশের নিরীহ জনগণকে। এই বিবাদ এখন প্রতীকায়িত রূপ নিয়েছে ক্রিকেট মাঠে। সেখানে ম্যাচ জয় যেন যুদ্ধ জয়। একই বিষয় দেখি তিক্ত ইতিহাসের সাক্ষী দুই প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যাণ্ডের মাঝে; মূল ভূখণ্ড ব্রিটেন ও প্রাক্তন উপনিবেশ অস্ট্রেলিয়ার মাঝে এ্যাসেজ সিরিজের তীব্র প্রতিদ্ধন্ধিতা তাদের ঐতিহাসিক বিরোধেরই সাক্ষী।






ক্রিকেট যেভাবে আমাদের জনগোষ্ঠিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে তা এককথায় অভূতপূর্ব ও আশা জাগানিয়া। বাঙালী এমনিতেই বহু মত ও পথে বিভক্ত এক স্বাধীন জাতিসত্ত্বা। কবি শঙ্খ ঘোষ লিখেছেন, ‘আমি পাঁচজন মানুষকে পঁচিশটি রাস্তায় যেতে বলি, তাতে প্রত্যেকেই পেয়ে যাবেন আড়াইটি করে শালপাতা।’ বাঙালী এমনি এক বহুধাবিভক্ত জাতি। সাম্প্রতিক সময়ে সে বিভক্ত রয়েছে দুটি প্রধান রাজনৈতিক শিবিরে, যাদের মাঝে মতপার্থক্য, স্বার্থের সংঘাত, হানাহানির তিক্তরূপ ধারণ করেছে। ভালো হোক বা মন্দ হোক, সরকারী দলের প্রতিটি উদ্যোগকে নিন্দা করাই বিরোধী দলের স্বভাব। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও আমরা দেখি কিছু মৌলিক বিষয় যেমন রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জাতীয় ঐক্য ও অখণ্ডতা রক্ষা, সন্ত্রাস দমন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ইত্যাদিতে বিরোধী দল সরকারী দলের পাশেই থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে এই সুস্থ রাজনীতির সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। দেশের ভিতর এই মৌল বিভাজন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত অশুভকর।






বহির্বিশ্বে আমাদের যে ইমেজ – তা খুব একটা স্বস্তিকর নয়। বিশ্ব বাংলাদেশকে চেনে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার, বিধ্বস্ত এক জনপদ হিসেবে, যা অতিদরিদ্র ও অসহায়। দুর্নীতিতে বিশ্বসেরা হয়ে আমরা যে তালিকার শীর্ষে উঠেছি, তাও আমাদের জন্য মর্যাদাকর কিছু বয়ে আনেনি। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের সেনারা জাতিসংঘের শান্তিমিশনে চমৎকার ভূমিকা পালন করে কিছু প্রশংসা অর্জন করেছে। খেলাধূলায় আমরা কোন পর্যায়েই উঠতে পারিনি। কেবল ক্রিকেটই একটি খেলা যা আমরা বিশ্বপর্যায়ে খেলি। যেখানে পরাক্রমশালী চীনকেও আমরা অনায়াসে হারিয়ে দিই, দিয়েছি সদ্যসমাপ্ত এশিয়ান গেমসে। ফুটবলের পরাক্রমশালী দেশ হল্যাণ্ডকে আমরা সহজেই হারিয়েছি ক্রিকেটে; বিশ্ব ফুটবলের সেরা দেশ ব্রাজিল বা পৃথিবীর শীর্ষ অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি আমেরিকা পাত্তা পাবে না আমাদের কাছে। ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিধর দেশ নিউজিল্যাণ্ড যখন আমাদের দামাল ছেলেদের হাতে ‘হোয়াইট ওয়াশ’ হয়, তখন ক্রিকেট নিয়ে আমরা মেতে না উঠে পারিনা। ক্রিকেট নিয়ে তাই আমাদের এত গর্ব, এত উত্তেজনা। এটি হয়ে উঠেছে আমাদের জয়ের, অহংয়ের প্রতীক। ক্রিকেট হয়ে উঠতে পারে আমাদের জাতীয় ঐক্যেরও প্রতীক!






কামরুল হাসান : কবি ও গল্পকার। বেসরকারি এক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।



This blog is open to all writers.
All work must be original. Author Kamrul Hassan has accepted the invitation to write for this blog.


Next: --> World Cup Cricket Opening Ceremony in Pictures